সুনামগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রজনতার মিছিলে গত ৪ আগস্ট হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক তিন এমপি, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশসহ ৯৯ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত আরও দেড় থেকে ২০০ জনকে আসামী করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে সুনামগঞ্জ আইনশৃঙ্খলা বিঘœকারী (দ্রুত বিচার) আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ জহুর আহমদের ভাই হাফিজ আহমদ। তিনি জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের এরোয়াখাই গ্রামের নাজির আহমদের ছেলে। বাদীর আবেদন দ্রুত বিচার আইনে রেকর্ড করতে সুনামগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালতের বিচারক নির্জন মিত্র।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল হুদা মুকুট, সাধারণ সম্পাদক নোমান বখত পলিন, সাবেক সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, রণজিত সরকার, সাবেক পৌর মেয়র নাদের বখত, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম শামীম, সাংগঠনিক সম্পাদক শংকর চন্দ্র দাস, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মঞ্জুর আহমদ খন্দকার, ব্যবসায়ী সজিব রঞ্জন দাস শল্টু, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা ফজলে রাব্বি স্মরণ, পুলিশের এএসপি রাজন কুমার দাস, ওসি খালেদ চৌধুরী, এসআই রিয়াজ আহমদ, জেলা স্বেচ্ছাবেক লীগের সভাপতি সুয়েব চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক জুবের আহমদ অপু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি দিপঙ্কর কান্তি দে, সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান রিপন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা আল-আমিন রহমান, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আবুল কালাম, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রীর এপিএস হাসনাত হোসেন, তার ভাই নূর হোসেন, সাবেক ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়র নূরুল ইসলাম বজলু, জেলা কৃষক লীগের সদস্য সচিব বিন্দু তালুকদার, মৎস্যজীবী লীগ নেতা ফজলুল হক , আওয়ামীলীগ নেতা রেজাউল আলম নিক্কু, বিল্পব শাহরিয়ার, অমল কর, রতন মিয়া, ওবাদুর রহমান কুবাদ, আবুল হোসেন খান, নুরুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা রঞ্জিত চৌধুরী রাজন, এহসান উজ্জ¦ল, হাসানুজ্জামান ইস্পাহানি, ফরহাদ, আফতাব উদ্দিন, ছাত্রলীগের সহ সভাপতি লিখন আহমদ, ফয়সল আহমদ, জিসান এনায়েত রাজা প্রমুখ।
বাদীর আবেদনে বলা হয়, ৪ আগস্ট সকালে শেখ হাসিনার পদত্যাগের একদফা দাবিতে সুনামগঞ্জ শহরের কালিবাড়ি এলাকায় জড়ো হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুকুট ও সাধারণ সম্পাদক পলিনের হুকুমে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ, যুবলীগে ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা। এ সময় তারা আন্দোলনকারীদের রামদা দিয়ে কুপিয়ে এবং হাতুড়ি, রড, হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে শতাধিক আন্দোলকারীকে গুরুতর জখম করে। সন্ত্রাসীরা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে প্রেট্রোল বোমা ও ককটেল নিক্ষেপ করে ত্রাসের সৃষ্টি করে।
অপরদিকে, মামলার বাদীর ছোটভাই জহুর আহমদ ও অপর আন্দোলনকারী রিপন আহমদের পায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে পঙ্গু করার অভিযোগ আনা হয়েছে এএসপি রাজন, ওসি খালেদ ও এসআই রিয়াজের বিরুদ্ধে। এছাড়া আসামী খন্দকার মঞ্জুর, দীপঙ্কর, অমল, রাজন, শংকর, সালেক মিয়া, আনাস, উকিলসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন আসামী অবৈধ পিস্তল দিয়ে গুলি করে অনেক আন্দোলনকারী ও পথচারীকে জখম করে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। এছাড়া আহত আন্দোলনকারীদের সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাডারদের বিরুদ্ধে।
বাদীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট মাসুক আলম, মল্লিক মইন উদ্দিন সোহেল, আব্দুল হক, হুমায়ূন কবির, মোশাহিদ আহমদ, আমিরুল হক, শহীদুল ইসলাম, শামীম আহমদ, সাজ্জাদ হোসেন, নাজিম কয়েস আজাদ, কামাল হোসেন, এআর জুয়েল।
DESK NEWS